সাধারণ ডট নেটে আপনাকে স্বাগতম! রেজিষ্ট্রেশন করে আজই আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে যান...
avatar
0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল?

1 টি উত্তর

avatar
0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ

১৯৭১ সাল, বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট--এসবের মুখে টিকতে না পেরে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হাতে নিয়ে দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দুঃখ-দুর্দশা, সংগ্রাম এবং বেঁচে থাকার জন্য তাদের অবিরাম প্রচেষ্টা ছিল মুক্তিযুদ্ধের এক করুণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শরণার্থী প্রবাহ এবং আশ্রয়স্থল

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয় শরণার্থী প্রবাহ। এপ্রিল মাস থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয় বাঙালি শরণার্থীদের অন্তহীন ঢল। পশ্চিমবঙ্গ ছিল এই শরণার্থী প্রবাহের প্রধান গন্তব্যস্থল। প্রায় ৭৪ লাখ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। এছাড়া ত্রিপুরায় ১৪ লাখ, মেঘালয়ে ৬ লাখ, আসামে ৩ লাখ শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করে। অন্যান্য রাজ্যেও বিক্ষিপ্তভাবে শরণার্থীরা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি কিছু শরণার্থী মায়ানমারেও আশ্রয় নেয়, যদিও সেখানে তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার করা হয়নি।

শরণার্থী শিবিরের জীবন: এক করুণ চিত্র

শরণার্থী শিবিরের জীবন ছিল অসহনীয়। রেডক্রস, ভারত সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাঁবু তৈরি করে দিলেও, তা সকল শরণার্থীর জন্য যথেষ্ট ছিল না। স্কুল, কলেজ, ছাত্রাবাস খালি করে শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হলেও স্থানের তীব্র অভাব ছিল। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও, অনেকে আবার খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাত।

খাদ্য, পানি, ওষুধ, পয়ঃনিষ্কাশন--সবকিছুরই তীব্র সংকট ছিল। কলেরা, আমাশয়, ডায়রিয়া এবং চর্মরোগের মতো বিভিন্ন রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক মৃতদেহ খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকত, যা শকুন, শেয়ালের খাদ্য হত। এ ছিল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

শিশু এবং নারীদের দুর্ভোগ

শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশু এবং নারীরা ছিল সবচেয়ে বেশি অসহায়। অপুষ্টিতে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। নারীরা ছিল ধর্ষণের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে। অনেক নারী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধর্ষিত হন এবং সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত হন।

ভারত সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

ভারত সরকার শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও শরণার্থীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শরণার্থী সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের অবদান

মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের অবদান ছিল অপরিসীম। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতেন। অনেকে আবার মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শরণার্থী শিবিরগুলো ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল।

স্বাধীনতার পর শরণার্থীদের ফিরে আসা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক শরণার্থী দেশে ফিরে আসেন। তবে অনেকে আবার ভারতেই থেকে যান। যারা ফিরে আসেন, তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে ছিলেন, সম্পত্তি লুট হয়ে ছিল। তারা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সাহায্য পেয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের কাহিনী হলো এক করুণ কিন্তু অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী। তাদের দুঃখ-দুর্দশা, সংগ্রাম এবং বলিদান আমাদের মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার মূল্য কত বড়।

এরকম আরও প্রশ্ন

0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ
মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্ববৃহৎ গণহত্যাটি কোথায় হয়?
মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্ববৃহৎ গণহত্যাটি কোথায় হয়?
0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ
সর্বপ্রথম 'বঙ্গ' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় কোথায়?
সর্বপ্রথম 'বঙ্গ' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় কোথায়?
1 পছন্দ 0 টি অপছন্দ
সেভেন সিস্টার্স কি? সেভেন সিস্টার্স বলতে কি বুঝায়?
কেন সেভেন সিস্টার্স নামে ডাকা হয়?
0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ
মেয়েরা কত সময় মিলন করতে পারে?
স্বাভাবিক ভাবে মেয়েরা কত সময় মিলন করতে পারে?
0 টি পছন্দ 0 টি অপছন্দ
শূন্যের ব্যবহার কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?
সর্বপ্রথম কে বা কারা শূন্যের ব্যবহার শুরু করে?
সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। এখানে আপনি আপনার বিভিন্ন বিষয়ে ব্যক্তিগতসহ যেকোনো সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন এবং অন্যদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহযোগীতা করতে পারবেন। আজই আমাদের সাথে শুরু করে দিন আপনার পথচলা।
...