আমরা কথায় কথায় একে অপরকে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিই, মুড়ির সাথে জিলাপি মেশালে আমরা তাকে মঙ্গল গ্রহের প্রাণী বানিয়ে দিই কিন্তু আসলেই মঙ্গল গ্রহে কোনো প্রাণী আছে কি? মঙ্গল গ্রহে কি মানুষ বসতি নির্মাণ করতে পারবে? এটা ফ্যাক্ট নাকি মিথ? আপনার কি মনে হয় এসব প্রশ্নের উত্তর কি হবে?
আপনার অপিনিয়ন নেওয়ার আগে আমি একটু হালকা কিছু কথা বলে নিই। মঙ্গল গ্রহ সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। এটি সূর্য থেকে প্রায় ২২.৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মঙ্গলের ব্যাস পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক এবং এর ভর পৃথিবীর মাত্র ১০%। মঙ্গলের পৃষ্ঠে রয়েছে বিশাল আগ্নেয়গিরি, গভীর গিরিখাত এবং শুকনো নদীর খাত। আর এই শুকনো নদীর খাত দেখেই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, একসময় মঙ্গলে নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত পানি ছিল যা এখন শুকিয়ে গেছে।
মঙ্গলে জীবনের গল্প শুরু করার আগে আমাদের মঙ্গলের পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। মঙ্গলের পরিবেশ মোটেও পৃথিবীর মতো নয়। পৃথিবীর তুলনায় এর বায়ুমণ্ডল অনেক হালকা। বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৫% -ই কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং খুবই সামান্য পরিমাণে রয়েছে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। মঙ্গলে শুকনো নদীর খাত পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত মঙ্গলের পৃষ্ঠে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। তবে মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে বরফের স্তর রয়েছে, যা মূলত জলীয় বরফ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ দিয়ে গঠিত।
আবার মঙ্গল পৃষ্ঠে ধূলিঝড় প্রায়ই হয়ে থাকে। এটা অনেক সময় এতোটা ভয়াবহ হয় যে এই ঝড় পুরো গ্রহকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে। আবার মঙ্গলের আবহাওয়াও অনেক অদ্ভুত। এর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা প্রায় -৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা রাতের বেলায় -১৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। দিনের বেলা তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম। এর ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন পেশি এবং হাড়ের দুর্বলতা।
তাহলে মঙ্গল গ্রহে এতো এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষ মঙ্গলে যেতে চায়? কেন মনে হয় যে মানুষ মঙ্গলে বসতি নির্মাণ করতে পারবে? ইংরেজ সায়েন্স ফিকশন রাইটার Arthur C. Clarke এর মতে, যদি মঙ্গলে বসতি নির্মাণ সম্ভবও হয় তাহলেও সেটা শত বছর লেগে যাবে শুধুমাত্র এখন পর্যন্ত যেসব সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা গেছে সেগুলো সমাধান করে বসবাসযোগ্য করতে।
মঙ্গলে জীবনের জন্য কিছু মৌলিক উপাদান অপরিহার্য যেমন পানি, অক্সিজেন, খাদ্য এবং উপযুক্ত তাপমাত্রা। মঙ্গলে এই সবকিছু পাওয়া খুবই কঠিন। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, মঙ্গলের মাটি থেকে পানি বের করা সম্ভব। ২০০৭ সালের মার্চে নাসা এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে যে পরিমাণ বরফ রয়েছে তা গলিয়ে দিলে সমগ্র গ্রহটি পানিতে ডুবে যাবে এবং এই জলভাগের গভীরতা হবে প্রায় ১১ মিটার (৩৬ ফুট)। সৌরশক্তি ব্যবহার করে শক্তির চাহিদা মেটানো যাবে।
গ্রীনহাউজ ইফেক্ট তৈরি করে তাপমাত্রা অনুকূলে আনা সম্ভব হতে পারে।
এছাড়া মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে অক্সিজেন উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নাসার "মার্স ২০২০" মিশনে পাঠানো রোভার "পারসিভারেন্স" মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন উৎপাদনের পরীক্ষা চালিয়েছে এবং সফলও হয়েছে।
কিন্তু তারপরও আপনি যদি মঙ্গল গ্রহে যান তাকে আপনাকে প্রায় সময় একটা শেল্টারের ভিতরে বা স্পেস স্যুট এর ভিতরে থাকতে হবে। কেননা মঙ্গলের পরিবেশ এতোটাই প্রতিকূল যে প্রাথমিক অবস্থায় আপনার যেকোনো সময় যেকোনো কিছুই হয়ে যেতে পারে। পুরোপুরি বসবাসযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত আপনি একদমই পৃথিবীর মতো নরমাল জীবন-যাপন করতে পারবেন না।
তাহলে এখন আপনার কী মনে হয়? মানুষের কি পক্ষে কি মঙ্গলে আসলেই বসতি নির্মাণ করে বসবাস করা সম্ভব? আর যদি সম্ভব হয়ও তাহলে আদৌ কি আমাদের উচিত মঙ্গলে বসতি নির্মাণ করে পৃথিবী ছেড়ে সেখানে বসবাস করা?
Sources:
-----------
NASA Mars Exploration - https://science.nasa.gov/planetary-science/programs/mars-exploration/science-goals/
BBC Sky at Night Magazine - https://www.skyatnightmagazine.com/space-science/could-we-live-on-mars